মহানবী সাঃ এর জীবনী

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পুর্ন জীবনী বাংলা সিরিজ আর্টিকেল  এর  ৮ম পর্ব সম্পর্কে। আপনি যদি 'মহানবী সাঃ এর সম্পুর্ন জীবনী' এই সিরিজ আর্টিকেলে নতুন হয়ে থাকেন এবং ৭ম পর্বটি পড়তে চান তাহলে এখানে ক্লিক করে আগের পর্বটি পড়ে নিতে পারেন। চলুন আজকের পর্ব শুরু করা যাক-

 মহানবী সাঃ এর নবুওয়তের প্রথম তিন বৎসর 

ইতঃপূর্বে হযরত 'আয়িশা (রাঃ)-এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রথমবার ওহী অবতীর্ণ হবার পর বিশেষ কোন শুভউদ্দেশ্যে, কিছু দিন পর্যন্ত ওহী অবতীর্ণ হওয়া বন্ধ ছিল। তৎপর একদিন রাসূল (সাঃ) আকাশ হতে হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পেলেন। তখন তিনি মাথা উত্তোলন করে উপরের দিকে তাকিয়ে দেখেন যে, জিবরাঈল (আঃ) আসমান ও যমীনের মধ্যস্থলে একটা সিংহাসনে উপবিষ্ট আছেন। এ অপরূপ দৃশ্য দর্শন করে তিনি ভয়বিহ্বল চিত্তে গৃহে ফিরলেন এবং বস্ত্রাচ্ছাদিত হয়ে শুয়ে পড়লেন। তখনই অবতীর্ণ হল- "হে বস্ত্রাচ্ছাদিত, উঠুন এবং ভয় প্রদর্শন করুন।"

Nobijir jiboni
মহানবী সাঃ এর জীবনী-৮ম পর্ব

অর্থাৎ নবুওয়াতের কর্তব্য পালনের জন্য প্রস্তুত হউন এবং সত্য প্রচার করুন প্রথমবারের ওহীতে যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছিল, এবার তা প্রচার করার জন্য আল্লাহ তাঁকে নির্দেশ দিলেন। প্রচার কার্যে যেন কোন প্রকার অবহেলা না করেন। তজ্জন্য আল্লাহ্ পূর্বাহ্নেই তাঁকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। প্রচার দুই প্রকার হয়ে থাকে-

  • (ক) আল্লাহর মনোনীত সত্য ধর্ম গ্রহণ করতে এবং তার নির্দেশিত সৎকাজ করতে অসম্মত হলে যে আল্লাহর কোপানলে পতিত হতে হবে এবং পরকালে দোযখের কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে, এ ভয় প্রদর্শন করা। 
  • (খ) আল্লাহর আদেশানুযায়ী সৎপথে চললে এবং সৎকাজ করলে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে এবং পরকালে জান্নাতের অফুরন্ত সুখ-শান্তি ভোগ করতে পারা যাবে, এই সুসংবাদ প্রদান করা।

প্রথম প্রকার প্রচার শুধু অমুসলমানদের জন্যই হয়ে থাকে। যেহেতু সে-কালে দুই এক জন ছাড়া এধরাধমে আর কোন মুসলমানই ছিল না, এজন্যই ভয় প্রদর্শন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেহেতু তওহীদ বা একত্ববাদই সমস্ত সত্যের মূল উৎস এবং এই মহাসত্যের প্রচার করাই হল সর্বপ্রথম সর্বপ্রধান উদ্দেশ্য, এজন্যই আল্লাহ তা 'আলা বলতেছেন-

"এবং আপনি স্বীয় প্রভুর মহত্ত্ব ঘোষণা করুন।"

যিনি সত্য প্রচার করবেন, মানব সমাজকে সৎপথ প্রদর্শন করবেন, অন্তরে বাইরে সর্বদিক দিয়ে তাঁর আদর্শ পুরুষ হওয়া উচিত। এজন্য আল্লাহ্ তা'আলা সত্য প্রচারের নির্দেশের সঙ্গে কয়েকটি বিষয়ের শিক্ষা প্রদান করতেছেন।

" এবং আপনার পোশাক-পরিচ্ছদসমূহ পাক সাফ রাখুন।" নামায পড়ার জন্য সর্বদা কাপড়-চোপড় পাক-সাফ থাকা উচিত।

অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেন- "এবং পৌত্তলিকতা বর্জনে অটল থাকুন।"

অতীত জীবনে যেভাবে আপনি পৌত্তলিকতাকে ঘৃণা করে আসছেন, চিরদিন এই ভাবেই ঘৃণা করতে থাকুন।

পৌত্তলিকতা একত্ববাদের পরিপন্থী মহাপাপ, এই কথার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করার জন্য আল্লাহ তা'আলা হযরত মুহাম্মদ

(সাঃ) কে এই নির্দেশ দিয়েছেন। নতুবা তিনি তো ছিলেন মাসুম বা নিষ্পাপ এবং পৌত্তলিকতার পরম শত্রু। আল্লাহ

তা'আলা আরও বলেন- "এবং অধিকতর প্রত্যুপকারের আশায় কিছু দান করবেন না।"

এটা সাধারণভাবে সকলের জন্যই অশোভন কিন্তু যেহেতু রাসূল (সাঃ)-এর মর্যাদা অতি উচ্চ, এই কারনে তা তাঁর জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তা'আলা বলেন-

"এবং (ধর্ম প্রচারে আপনাকে যে কঠোর পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে, তাতে) আপনি আপনার প্রভুর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ধৈর্য ধারণ করে থাকুন।

দ্বিতীয় বারের ওহীতে এই কয়েকটি আয়াতই অবতীর্ণ হল। এবার তিনি সত্য প্রচারের জন্য আদিষ্ট হলেন।

কি পদ্ধতিতে কি কি প্রচার করতে হবে, এই আয়াত কয়টিতে আল্লাহ তা'আলা তাও তাঁকে পরিষ্কারভাবে বলে দিলেন।আয়াতগুলো সারমর্ম হল এই-

  • সত্যের আহ্বানে যারা সাড়া না দেয়, পরিণামে যে তাদেরকে মহাবিপদে পতিত হতে হবে এবং জাহান্নামের ভীষণ আযাব ভোগ করতে হবে, এ বিষয়ে তাদেরকে সর্তক করে দেবেন।
  • একমাত্র আল্লাহর প্রভুত্ব, মহত্ত্ব ও একত্ব ঘোষণা করবেন।
  • বাহ্যিক ও চারিত্রিক সর্বপ্রকার কলুষতা হতে স্বয়ং পবিত্র থেকে লোকদেরকে হাতে কলমে শিক্ষা দেবেন।
  • স্বয়ং পৌত্তলিকতা বর্জনে দৃঢ়পদ থেকে লোকদেরকে তওহীদের পরিপন্থী শিরক্ বিদ'আত এবং বহুত্ববাদ পরিত্যাগ করার এবং তওহীদের প্রতি আস্থাবান হওয়ার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা দান করবেন।
  • সত্য প্রচার করে, আল্লাহর বাণী শিক্ষা দিয়ে অথবা যে কোন প্রকারে লোকের উপকার করে তার বিনিময়ে কোন প্রকার পারিতোষিক, সুখ্যাতি ও প্রতিপত্তি লাভ ইত্যাদি কোন প্রকারের স্বার্থ বা প্রত্যুপকারের আশা'পোষণ করবেন না।
  • এই মহান কর্তব্য পালনে আপনার প্রতি যত অত্যাচার ও উৎপীড়নই হউক এবং আপনাকে যে কোন কঠোর অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীনই হতে হোক, আপনি অবিচলিত চিত্তে তাতে আল্লাহর নামে ধৈর্য ধারণ করবেন।

সত্যের প্রথম প্রচার: প্রচারের আদেশ প্রাপ্ত হয়ে রাসূল (সাঃ) কর্তব্য পালনে দৃঢ় সংকল্প হলেন। কিন্তু তওহীদের প্রচার সহজ ব্যাপার ছিল না। সারা জাহানের বিরুদ্ধে তাঁকে একা এই অভিযান চালিয়ে যেতে হবে। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত প্রত্যেকের কর্ণকুহরে তওহীদের অমিয় বাণী পৌছাতে হবে। যে-সময় সারা পৃথিবী শিরক বিদ'আত এবং বাহুত্ববাদের ঘনটায় আচ্ছন্ন, সে-সময় তওহীদের প্রচার কি সহজ ব্যাপার? এটা ছিল এক জটিল সমস্যা।

সুতরাং অত্যন্ত ধীর ও স্থিরভাবে চিন্তা করে এবং সব দিক বিবেচনা করে কাজে হাত দেবার প্রয়োজন ছিল। এই সঙ্কটজনক রহস্য সর্বপ্রথম কার নিকট প্রকাশ করা যায়, এটা ছিল প্রথম সমস্যা।

যাঁরা রাসূল (সাঃ)-এর সাহচর্যে থেকে তাঁর স্বভাব চরিত্র সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞান এবং তাঁর বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সমস্ত বিষয়ের পূর্ণ অভিজ্ঞতা লাভ করার সুযোগ পেয়েছিলেন, এই কাজের জন্য মনোনীত হবার তাঁরাই ছিলেন পূর্ণ উপযুক্ত। কারণ তাঁরা পূর্বঅভিজ্ঞতা দ্বারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য হবেন যে, এই অনুপম চরিত্রবান, সত্যের প্রতীক, আদর্শ মহামানব যা বলবেন, তা যে সত্য, এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

এদের মধ্যে হযরত খাদীজা, হযরত 'আলী, হযরত যায়দ, হযরত আবূ বকর (রাঃ)-ই ছিলেন প্রধান। হযরত খাদীজা ত আর কেউ নন। রাসূল (সাঃ)-এরই চিরসংগিনী সহধর্মিনী। তিনি হযরতের ভিতর বাইর এত সুন্দররূপে দেখতে পেয়েছেন, যা অন্য কারও জন্য সম্ভবপর হয় নি। এজন্যই এই পুণ্যবর্তী মহীয়সী মহিলা নবজাত ইসলাম-শিশুকে ভূমিষ্ঠ হওয়া মাত্রই সবার আগে উঠায়ে বুকে ধারণ করলেন। হযরত 'আলী (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর প্রিয়তম পিতৃব্য খাজা আবূ তালিবের পুত্র। চাচার সাংসারিক অবস্থা অসচ্ছল দেখে তাঁর ব্যয়ভার হ্রাস করার জন্য রাসূল (সাঃ) পূর্ব হতেই হযরত 'আলীর লালন-পালন ভার নিজের উপর নিয়ে রেখেছিলেন। এজন্য শৈশব হতেই হযরত 'আলী তাঁর সংসর্গ লাভের সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছিলেন। হযরত যায়দের কথা পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, দাসত্ব হতে মুক্ত করে তিনি তাঁকে পুত্ররূপে লালন পালন করতেছিলেন। এজন্য তিনিও তাঁর সাহচর্য লাভের পূর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন। এরা সকলেই ছিলেন হযরতের পরিবারভুক্ত লোক। হযরত আবূ বকর (রাঃ) অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে দীর্ঘকাল যাবতই তাঁর সাহচর্যে থাকার সৌভাগ্য লাভ করে আসতেছিলেন।

এজন্য সর্বপ্রথম হযরত খাদীজা কে আল্লাহর পয়গাম শুনালেন। কিন্তু তিনি এর পূর্বেই ঈমান আনয়ন করত মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ, স্বামীর সাথে তাঁর এত ঘনিষ্ঠতা এবং সম্পর্ক ছিল, যেন তাঁরা একই বোটার দুটি ফুল, একই তারে গ্রথিত দুটি বৈদ্যুতিক বাতি একটির সাথে অপরটিও জ্বলে উঠেছিল।

তৎপর তিনি যায়দ ইবন সাবিত, 'আলী ইবন আবূ তালিব এবং আবু বকর সিদ্দীককে ইসলামের পয়গাম পৌছালেন। তাঁরাও প্রথম দিবসেই মুসলমান হয়ে গেলেন। হযরত আবুবকর সিদ্দীক (রাঃ) এবং হযরত 'আলী মুর্তাযা, এতদুভয়ের মধ্যে সর্বপ্রথম কে ইসলাম গ্রহণ করেন, এ বিষয়ে 'আলিমগণের মধ্যে মতভেদ আছে।

হযরত আবু বকর (রাঃ) যেমন ছিলেন বিরাট ধন-সম্পত্তির অধিকারী, তেমনি ছিলেন দানবীর। মক্কা নগরে তাঁর বিরাট কারবার ছিল। তিনি কাপড়ের ব্যবসা করতেন। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন তখন তাঁর নিকট চল্লিশ হাজার দিরহাম ছিল। তিনি অত্যন্ত প্রতিভাশালী জ্ঞানী লোক ছিলেন। সব বিষয়েই তাঁর অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। মক্কার শীর্ষস্থানীয় লোকেরা প্রায়ই জটিল সমস্যায় তাঁর সাথে পরামর্শ করতেন। সর্বসাধারণের সাথে তাঁর অত্যন্ত সম্ভাব ছিল।

তিনি মুসলমান হবার পর লোকদেরকে গোপনে ইসলাম গ্রহণের উৎসাহ প্রদান করতে আরম্ভ করলেন। তাঁর প্রচেষ্টায় পাঁচজন খ্যাতনামা সাহাবী ইসলাম গ্রহণ করেন। তৎপর এদের সমবেত প্রচেষ্টায় ক্রমান্বয়ে মুসলমানের সংখ্যা বাড়তে লাগল এবং গোপনে ইসলামের প্রচারও চলতে লাগল। এরূপে চুপে চুপে একদল লোক ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হলেন। এরাই 'সাবিকীনে আওয়ালীন' বা অগ্রবর্তী মুসলমান। পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এদের ভূয়সী প্রশংসা এবং আল্লাহ ও রাসূলের দরবারে এঁদের অতি বড় মর্যাদার কথা বর্ণিত হয়েছে। অতএব এস্থলে এই মহাত্মাগণের নাম উল্লেখ করা সমীচীন মনে হচ্ছে। প্রাথমিক মুসলিমমণ্ডলী-

  1. হযরত খাদীজা (রাঃ) 
  2. হযরত আলী (রাঃ) 
  3. হযরত আবূ বকর (রাঃ) 
  4. হযরত যায়দ বিন হারিসা। (রাঃ) পূর্বেই এদের পরিচয় বর্ণিত হয়েছে। তৎপর হযরত আবুবকর। (রাঃ)-এর চেষ্টায় যাঁরা ইসলামে দীক্ষিত হলেন তাঁদের নাম এই-
  5. হযরত 'উসমান গনী (রাঃ)
  6. হযরত যুবায়র (রাঃ)
  7. হযরত 'আবদুর রহমান (রাঃ)
  8. হযরত তালহা বিন 'উবায়দুল্লাহ (রাঃ)
  9. সা:আদ ইবন আবূ ওক্কাস (রাঃ)। ইনি আল্আশারাতুল মুবাশশারা-এর অন্যতম। ইসলামের জন্য ইনিই সর্বপ্রথম তীর নিক্ষেপ করেন এবং ইনিই সর্বপ্রথম একজন কাফিরকে হত্যা করেন। পরবর্তী কালে ইনিই মাদায়িন জয় করেছিলেন।
  10. হারিসের কন্যা লুবাবা (রাঃ)। ইনি হযরত 'আব্বাসের স্ত্রী। মহিলাগণের মধ্যে বিবি খাদীজার পর ইনিই সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন।
  11. হযরত খাব্বার (রাঃ)। ইনিই সর্বপ্রথম মুসলমান হবার কথা কুরায়শদের নিকট প্রকাশ করেন।
  12. যায়দের পুত্র সা'ঈদ (রাঃ)। ইনি প্রাগৈসলামিক যুগের প্রসিদ্ধ একত্ববাদী যায়দের পুত্র এবং হযরত 'উমরের ভগ্নি ফাতিমার স্বামী এবং আল্-'আশারাতুল মুবাশ্বারার অন্যতম।
  13. হযরত 'আবদুল্লাহ ইবন মাস'উদ (রাঃ)। ইনি সর্বদা রাসূল (সাঃ)-এর খিদমতে থাকতেন। এজন্য তাঁকে রাসূলের পরিবারের লোক মনে করা হত।
  14. হযরত 'উসমান ইব্‌ন মায়'উন (রাঃ)। ইনি স্বীয় পুত্র সায়িবকে নিয়ে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। পরে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। মুহাজিরগণের মধ্যে মদীনায় সর্বপ্রথম তাঁরই মৃত্যু হয় এবং তিনি জান্নাতুল বাকী' কবরস্থানে সমাহিত হন।
  15. হযরত আক্ৰম (রাঃ)। সাফা পাহাড়ের পাদদেশে তাঁর বাসস্থান ছিল। প্রথম প্রথম রাসূল (সাঃ) তাঁর বাড়ীতে মুসলমানদেরকে শিক্ষা দিতেন এবং সংগোপনে ইসলাম প্রচার করতেন।
  16. হযরত আবূ সালিমা (রাঃ)। ইনিই সর্বপ্রথম হিজরত করেছিলেন।
  17. হযরত আবূ 'উবায়দা (রাঃ) ইনি 'আল্-'আশারাতুল মুবাশশারা-এর অন্যতম। তিনি হাক্কা ও মদীনা উভয় স্থানেই হিজরত করেছিলেন। ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি য়্যামনে প্রেরিত হয়েছিলেন। রাসূল (সাঃ) তাঁকে 'আমীনুল উম্মত' বা 'উম্মতে মুহাম্মদীর বিশ্বাসী' উপাধি দান করেছিলেন। হযরত 'উমর হযরত খালিদকে পদচ্যুত করে তাঁকেই দেমাঙ্কের যুদ্ধে সেনাপতির পদে নিযুক্ত করেছিলেন।
  18. হযরত কুদামা (রাঃ)। ইনি হযরত 'উমরের ভগ্নি সুফিয়ার স্বামী ছিলেন। উভয় হিজরতের এবং বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
  19. হযরত 'উবায়দা (রাঃ)। রাসূল (সাঃ)-এর পিতৃব্য হারিসের পুত্র ছিলেন। মদীনায় হিজরত করেছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
  20. হযরত জা'ফর (রাঃ)। হযরত 'আলীর ভ্রাতা ছিলেন।
  21. জহশের পুত্র 'আবদুল্লাহ্ (রাঃ)। তিনি হাবশা ও মদীনা উভয় স্থানে হিজরত করেছিলেন। উহুদের যুদ্ধে শহীদ হন এবং হযরত হামযার সাথে একই কবরে সমাধিস্থ হন।
  22. জহশের পুত্র আবু আহমদ (রাঃ)। ইনি এবং পূর্ব বর্ণিত 'আবদুল্লাহ্ উভয়েই রাসূল পত্নী হযরত যয়নবের ভাই ছিলেন।
  23. 'উসমান ইবন মায'উনের পুত্র সায়িব (রাঃ)। তিনি আপন পিতার সাথে হাবশা এবং মদীনা উভয় স্থানে হিজরত করেছিলেন। 'বুওয়াত' যুদ্ধের সময় রাসূল (সাঃ) তাঁকে মদীনার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন।
  24. আয়হরের পুত্র মুত্তালিব (রাঃ)। ইনি হিজরত করে হাবশায় গেলেন। সেখানে তিনি পরলোক গমন করেন।
  25. হযরত 'উমায়র ইবন আবু ওঞ্চাস্ (রাঃ)। ইনি হযরত সা'আদ ইবন আবূ ওক্কাসের ভাই। বদর যুদ্ধে তিনি শহীদ হন।
  26. হযরত আবু বকরের কন্যা আসূমা (রাঃ)। ইনি হযরত 'আবদুল্লাহ ইবন যুবায়রের মাতা ছিলেন। ইনি গর্ভাবস্থায় মদীনায় হিজরত করেছিলেন। মদীনায় পৌঁছাবার সাথে সাথেই 'কু'বা নামক স্থানে তিনি হযরত 'আবদুল্লাহকে প্রসব করেন। সুতরাং হযরত 'আবদুল্লাহই মুহাজিরগণের মধ্যে প্রথমজাত শিশু ছিলেন।
  27. হযরত 'আয়্যাশ (রাঃ)। ইনি আবূ জাহলের সহোদর এবং হযরত খালিদ ইব্‌ন ওলীদের চাচাত ভাই ছিলেন। ইনি হিজরত করে মদীনায় এসেছিলেন। কিন্তু আবু জাহল তাঁকে ফাঁকি দিয়ে মক্কায় নিয়ে যায় এবং তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতন করতে থাকে। রাসূল (সাঃ) তাঁর মুক্তির জন্য ফজরের নামাযে কুনুতে নাযিলা পড়তেন।
  28. সলীত ইবন 'আমর (রাঃ)। 'ইনি হাবশার মুহাজির ছিলেন। রাসূল (সাঃ) য়্যামামার সরদার হুযার নিকট তাঁকে দূতরূপে প্রেরণ করেছিলেন।
  29. হযরত খুনায়স্ বিন হুযাফা (রাঃ)। তিনি উভয় হিজরতের মুহাজির এবং বদর ও ওহুদের মুজাহিদ ছিলেন। ওহুদের যুদ্ধে তিনি আহত হয়েছিলেন। এতেই তাঁর মৃত্যু হয়। হযরত 'উমরের কন্যা হাফসা (রাঃ) কে প্রথম ইনিই বিবাহ করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর রাসূল (সাঃ) হযরত হাফসা (রাঃ) কে বিবাহ করেন।
  30. রবী'আর পুত্র 'আমির (রাঃ)। ইনি হযরত 'উমরের পিতা খাত্তাবের পোষ্যপুত্র ছিলেন। তিনি উভয় হিজরতে, বদর-যুদ্ধে এবং পরবর্তী যুদ্ধসমূহে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। চতুর্থ খলীফা হবরত 'উসমান (রাঃ) হজ্জ যাত্রাকালে তাঁকে মদীনার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন।
  31. হারিসের পুত্র হাতিব, খাত্তাব এবং মু'আম্মার (রাঃ)। হাফিয ইবন হজরের বর্ণনা মতে প্রথমোক্ত দুই মহাত্মা হিজরত করে হাবশায় যান এবং সেখানেই তাঁদের মৃত্যু হয়। ইবন ইসহাকের বর্ণনানুযায়ী হযরত মু'আম্মার বদর-যুদ্ধে শরীক ছিলেন।
  32. হযরত খালিদ ইবন হিযাম (রাঃ) ইনি হযরত খাদীজার ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন। হাবশায় হিজরত করার পথে সর্প দংশিত হয়ে পরলোক গমন করেন।
  33. বুকায়রের পুত্র হযরত 'আকীল হযরত ইয়াস, হযরত খালিদ এবং হযরত 'আমির (রাঃ) তাঁরা চার ভাই সকলেই বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তন্মধ্যে হযরত 'আকীল এই যুদ্ধে শহীদ হন।
  34. হযরত 'আম্মার বিন য়‍্যাসির (রাঃ)। রাসূল (সাঃ) তাঁকে বলেছিলেন, বিদ্রোহিগণ কর্তৃক তুমি নিহত হবে। পরে তিনি সিফফীন যুদ্ধে হযরত মু'আবিয়া (রাঃ)-এর সৈন্যগণ কর্তৃক নিহত হন।
  35. সিনানের পুত্র সুহায়ব (রাঃ)। ইনি ইসলামের জন্য বহু কষ্ট সহ্য করেছেন। হযরত 'উমর (রাঃ) সুহায়বকে তাঁরা জানাযা পড়াবার জন্য অসিয়াত করে গিয়েছিলেন।
  36. আবু হুযায়ফা (রাঃ)। ইনি হযরত মু'আবিয়া (রাঃ)-এর মামা ছিলেন। হাবশা ও মদীনা উভয় হিজরতের এবং বদরের যুদ্ধে শরীক ছিলেন। বায়তুল মুকাদ্দাস কা'বা উভয় কিবলার দিকে নামায পড়েছিলেন।
  37. সুমাইয়া (রাঃ)। ইনি হযরত 'আম্মার বিন য়‍্যাসিরের মা ছিলেন। এতদ্ভিন্ন আমীসের কন্যা আস্যা, সালামের কন্যা আসমা, হযরত উমরের ভগ্নি ফাতিমা প্রমুখ আরও কতিপয় মুসলমান হলেন। 

 গোপনে প্রচার 

এরূপে সংগোপনে ও সন্তর্পণে ইসলামের প্রচার চলতে লাগল। ইসলাম-প্রচারের কথা শত্রুদের নিকট যাতে প্রকাশিত না হয় তজ্জন্য অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা হত। নামাযের সময় হলে রাসূল (সাঃ) দূর পর্বত-প্রান্তরে চলে যেতেন এবং সেখানে প্রাণ খুলে নিশ্চিন্ত মনে আল্লাহর 'ইবাদত করতেন। কিন্তু চান্তের নামায পড়ার জন্য গুপ্তস্থানে যাবার কোন আবশ্যক হত না। কারণ কুরায়শগণও এই নামাযকে জায়িয মনে করত।

একবার রাসূল (সাঃ) হযরত 'আলী (রাঃ) কে সঙ্গে নিয়ে পর্বতের উপত্যকায় গোপনে নামায পড়তেছিলেন। এমন সময় ঘটনাক্রমে খাজা আবূ তালিব সেই পথে কোথাও যেতেছিলেন। ভাতিজা ও পুত্রকে নামায পড়তে দেখে তিনি অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন। নামায শেষ হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন: কোন ধর্ম অনুযায়ী তোমরা এই উপাসনা করতেছ? হযরত উত্তর করলেনঃ "চাচাজান, এটা আমাদের পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর ধর্ম।" খাজা আবূ তালিব বললেন-"তোমরা যে-নিয়মে আল্লাহর "ইবাদত করলে তা ত বেশ সুন্দর। কিন্তু আমি পৈতৃক ধর্ম পরিত্যাগ করে তোমাদের ধর্ম গ্রহণ করতে পারব না। তবে তোমরা তোমাদের ধর্ম কর্ম করতে থাক, এতে আমি তোমাদের প্রতিবন্ধক হব না। অন্য কেউ অন্তরায় হলে আমি প্রাণ দিয়ে তোমাদের সাহায্য করব।


পরিশেষেঃ 

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনী সিরিজ পর্বের ৮ পর্ব শেষ করেছি। এই সিরিজের ৯ম পর্বটি পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url