মহানবী সাঃ এর জীবনী। Muhammad The Final Legacy. Ep-03

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর সম্পুর্ন জীবনী বাংলা সিরিজ এর য় পর্ব সম্পর্কে। আপনি যদি 'মহানবী সাঃ এর সম্পুর্ন জীবনী' এই সিরিজে নতুন হয়ে থাকেন এবং ২য় পর্বটি পড়তে চান তাহলে এখানে ক্লিক করে আগের পর্বটি পড়ে নিতে পারেন। চলুন আজকের পর্ব শুরু করা যাক-

 ফিজারযুদ্ধ 

'আরব জাতি ছিল দুর্ধর্ষ যোদ্ধা। এরা সর্বদা যুদ্ধক্ষেত্রেই জীবন কাটাত। সাম্প্রদায়িকতাই হত এসব যুদ্ধের প্রধান কারণ। বর্তমানে যেমন সর্বদা কাজে রত কর্মচারিগণের বিশ্রামের জন্য এবং বিশ্রামান্তে নূতন উদ্দীপনা নিয়ে স্বীয় কর্তব্য কর্মে যোদগান করার উদ্দেশ্যে মাঝে মাঝে অফিস আদালত বন্ধ রাখা হয়, তদ্রূপ অন্ধ যুদ্ধে যুদ্ধপ্রিয় 'আরবগণও বৎসরে চার মাস যুদ্ধ বন্ধ রাখত। রজব, যুল্কা'দা, যুলজিজ্জা এবং মুহাররম এই চার মাস যুদ্ধ বন্ধ থাকত। অতি প্রাচীন কাল হতেই 'আরবদের মধ্যে এই নিয়ম প্রচলিত হয়ে আসতেছিল। 'আরবগণ এ মাস চতুষ্টয়ের মধ্যে মারামারি, কাটাকাটি এবং যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ বলে বিশ্বাস করত। এজন্যই এ চারটি মাস তাদের নিকট নিষিদ্ধ মাস নামে পরিচিত ছিল।

এই অবসর সময়ে তারা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আমোদ-প্রোমোদের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিত। এই উপলক্ষে 'উকান, যুলমাজনা প্রভৃতি স্থানে কয়েকটি মেলা বসত। তন্মধ্যে 'উকায় মেলাই ছিল সর্বপ্রধান। ঐ সমস্ত মেলায় বিভিন্ন গোত্রের কবিগণ আসর জমায়ে বসত এবং অসাধারণ ধী-শক্তি ও অনুপম প্রতিভার পরিচয় দেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হত। তারা নিজ নিজ গোত্রের বংশ-মর্যাদা অতিথি-সেবা বীরত্ব ও রণ-নৈপুণ্য এবং তৎসঙ্গে বিপক্ষ গোত্রের নীচতা, কার্পণ্য কাপুরুষতা ও কুৎসা-কাহিনী বর্ণনা করে কবিতা আবৃত্তি করত। যাদের আত্মীয়-স্বজন কোন শত্রুর হাতে নিহত হয়েছে তারা নিষিদ্ধ মাসগুলো অতীত হওয়ার পরে প্রতিশোধ গ্রহণ করার জন্য এ সমস্ত সম্মলনে উপস্থিত হয়ে শত্রুদেরকে চিনে রাখত। এতদ্ব্যতীত ঘোড়দৌড়, জুয়া খেলা, মদ্য পান ইত্যাদি এসব মেলাতে হরদম চলতেই থাকত। এই সমস্ত ব্যাপার হতে অনেক সময় বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে ঝগড়া, মারামারি ও যুদ্ধ বিগ্রহের বীজ অঙ্কুরিত হয়ে উঠত।

Mohammad The Final Legacy. Ep-03
মহানবী সাঃ এর জীবনী। Mohammad The Final Legacy. Ep-03

এই 'উকায্যে পেশা হতে ফিজার যুদ্ধের উৎপত্তি হয়। হরবুল ফিজার অর্থ অন্যায় যুদ্ধ; নিষিদ্ধ মাসে এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল অথবা এ যুদ্ধ দ্বারা মল্লার পবিত্রতা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছিল বলেই একে 'হরবুল ফিজার' বলা হয়।

ফিজার যুদ্ধ বিভিন্ন কারনে চারবার অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ফিজারের সময় রাসূল (সাঃ)-এর বয়স চিল দশ বছর এবং চতুর্থ ফিজারের সময় তাঁর বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। এ চতুর্থ ফিজারেই রাসূল (সাঃ) আপন চাচাদের সাথে রণাঙ্গনে উপস্থিত হন।

হিরা-রাজ নু'মান হিজায়ের কোন প্রতিপত্তিশালী লোকের তত্ত্বাবধানে 'উকায মেলায় বিক্রয়ার্থ প্রতি বছর স্বীয় পণদ্রব্য প্রেরণ করতেন। এবারও তিনি বাণিজ্য-সম্ভারাদি প্রেরণের সংকল্প করে বললেন, "এবার আমার পণদ্রব্য বিক্রয়-ব্যবস্থার ভার কে গ্রহণ করবে?" বারবায় ইবন কায়স কিনানী বলল, "আমি কিনানা বংশীয় লোকদের মধ্যে আপনার পণ্যদ্রব্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা করব।" তখন হাওয়াযিন বংশীয় 'উরওয়া উঠে বলল, "তোমার পিতা তোমাকে তাড়ায়ে দিয়াছে। তুমি স্বগোত্র হতে বিতাড়িত কুকুর। তুমি আবার এত বড় কাজের ভার গ্রহণ করতে চাও? এই কাজ আমি করিব।" এরূপে এতদূভয়ের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। পরে এক সময় সুযোগ পেয়ে বাবায 'উরওয়াকে হত্যা করে ফেলে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ভয়াবহ চতুর্থ ফিজার-যুদ্ধের সূচনা হয়। এ যুদ্ধে এক পক্ষে কুরায়শ, কিনানা ও তাদের মিত্রগোত্রসমূহ এবং অপর পক্ষে হাওয়াযিন বংশের কায়স ও তাদের মিত্রগোত্রসমূহ ছিল। প্রত্যেক গোত্রই পৃথক পৃথক সেনাবাহিনী গঠন করেছিল। বন্ হাশিম-বাহিনীর পতাকা ছিল রাসূল (সাঃ)-এর চাচা যুবরায়র ইবন 'আব্দুল মুত্তালিবের হাতে। কুরায়শ সম্প্রদায়ের সাধারণ ও প্রধান সেনাপতি ছিলেন উমাইয়ার পুত্র হরব। ইনিই ছিলেন হযরত আবূ সুফইয়ানের পিতা এবং হযরত আমীর মু'আবিয়ার পিতামহ।

যুদ্ধ ভীষণ আকার ধারণ করল। আবু তালিব এবং তাঁর আত্মীয়-স্বজন সকলেই যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন। শেষের দিকে রাসূলকেও পিতৃব্যদের সাথে এ যুদ্ধে যোগদান করতে হয়েছিল। এ যুদ্ধে কুরাইশগণ ছিল সম্পূর্ণ নির্দোষ। বিপক্ষদের অন্যায় আক্রমণ প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যেই কুরাইশগণ এ যুদ্ধ করতে বাধ্য হন। রাসূল (সাঃ) এ যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন সত্য; কিন্তু তিনি স্বয়ং অস্ত্র ধারণ করেননি কেবল পিতৃব্যদের সাথে থেকে তাঁদেরকে শত্রুদের তীর হতে রক্ষা যরতেন এবং তীর সংগ্রহ করে তাঁদের হাতে দিতেন।

হায়! মানব হৃদয় 'যে কত পাষাণ। কত নিষ্ঠুর। এ নিষ্ঠুরতার ফলে কত ঘরেই না কত ক্রন্দন, কত হাহাকার উঠেছে! কত অবলা নারীই না বিধবা হয়ে চির দুঃখীনী সেজেছে। কত শিশুই না য়‍্যাতীম হয়ে পথের কাঙ্গাল সেজেছে। অকারণে মানুষ যে মানুষের প্রতি এত নির্মম অত্যাচার করতে পারে, মানুষ যে অহেতুক মানুষের রক্ত এমন করে পান করতে পারে, রণাঙ্গনে উপস্থিত থাকায় তা মূর্ত-করুণা মুহাম্মদ (সাঃ) স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেলেন। এ নির্মম দৃশ্য দেখে তাঁর করুণা-পূর্ণ হৃদয়ে যে কি আঘাত লেগেছিল, তা কে বলবে?

অবশেষে কতিপয় মহানুভব লোকের প্রচেষ্টায় এ তাণ্ডবলীলার পরিসমাপ্তি ঘটে। যুগ যুগান্তর হতে 'আরবভূমিতে এরূপ অন্যায় যুদ্ধ চলে আসতেছে। মক্কাবাসিগণ চিরদিনই এরূপ অন্যায় অত্যাচার দেখে আসতেছে। জীবনে কত বারই না তারা সমরক্ষেত্রে মরণ-বিভীষিকার নিষ্ঠুর ও নির্মম তাণ্ডবলীলা দেখতে পেয়েছে। কিন্তু কোন দিনই তাদের পাষাণ হৃদয়ে মমতাবেদনার উদ্রেক হয়নি। বেদনা ও দূরের কথা; বরং পাশব আনন্দে তারা আরও মেতে উঠেছে।

এবারের অবস্থা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। এ বার অত্যাচারিতদের আর্তনাদ অনেকেরই মর্মস্পর্শ করেছে। এবার এ আকস্মিক পরিবর্তনের কারণ কি? আমাদের বিশ্বাস নিখিল বিশ্বে ত্রাণকর্তা, মূর্ত করুণা, ভাবী বিশ্বনবীর নির্মল ও পবিত্র অন্তরে দুর্গতদের আর্তনাদে যে করুণ বেদনা জেগে উঠেছিল, তাহা সংক্রমনশীল। এ জন্যই এ বেদনা তাঁর অন্তরের চতুঃসীমার ভিতরে সীমাবদ্ধ থাকে নি; বরং অন্যান্যদের অন্তরেও তা সংক্রমিত হয়ে পড়েছিল। কারণ মহাপুরুষদের নিষ্কলুষ নিষ্ঠাবান অন্তরে যে সমস্ত পূর্ণময় ভাব উদয় হয় তা হয় সূর্যের ন্যায় আলোবিশিষ্ট উজ্জ্বল। সূর্যের প্রতিবিম্ব যেমন সম্মুখস্থ সমস্ত স্বচ্ছ পদার্থে প্রতিফলিত হয়ে এক সূর্য সহস্র স্থানে দৃষ্টি গোচর হয়, তদ্রূপ তাঁদের অন্তরের দীপ্তিময় ভাবের স্ফুরণও বিকশিত হয়ে সহস্র অন্তরে প্রতিফলিত হয় এবং এক সাথে একই ভাব সহস্র অন্তরে প্রতিভাত হয়ে উঠে।

এজন্যই হয়ত ফিজার-সমর অবসানের পর অনেকের মনেই এ ভাব জেগে উঠল যে, অত্যাচারীদের অত্যাচার রোধ করতে হবে; অত্যাচারিত, ব্যথিত, পীড়িতদেরকে রক্ষা করতে হবে; অশান্তি দূর করে দেশে শান্তির প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

রণক্ষেত্রে রাসূল (সাঃ)-এর চাচা যুবায়রের হাতে ছিল বনু হাশিমের জাতীয় পতাকা। তিনি সম্যকরূপে দেখতে পেয়েছিলেন, রণক্ষেত্রের বীভৎস লীলা। তাঁর অন্তরেই রাসূল (সাঃ)-এর অন্তরের প্রতিচ্ছায়া প্রতিফলিত হয়েছিল সম্যকরূপে এবং এ পূণ্যময় ভাবের সঞ্চার হয়েছিল প্রবলভাবে। সুতরাং যুদ্ধ অবসানের পর তিনিই সর্বপ্রথম এ প্রস্তাব উত্থাপন করলেন। তাঁর এ প্রস্তাবে কুরায়শ-যুবকগণ অতি আনন্দের সাথে সাড়া দিল। সকলেই শান্তি স্থাপনে বন্ধ পরিকর হল। তাদের সাড়ায় রাসূল (সাঃ) যারপর নাই আনন্দিত হলেন। স্বগোত্রে কোন লোক অন্যায় করলেও দলগতভাবে তাকে সমর্থন করা এবং তার মর্যাদা রক্ষার্থ সারা গোত্রের ধন-প্রাণ অকাতরে বিলায়ে দেয়া ছিল আরবের চিরাচরিত প্রথা। এই কুৎসিৎ মনোবৃত্তির মূলোৎপাটন করা স্বগোত্র পরগোত্র, স্বদেশী-বিদেশী নির্বিশেষে যে কেউ অন্যায় করে তার দমন এবং অত্যাচারিত ও ব্যথিতের সমর্থন করাই হল তাদের উদ্দেশ্য।

 হিলফুল ফযুল 

উল্লিখিত ফিজার যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া যুবায়র 'আবদুল্লাহ্ বিন জুদ'আনের গৃহে একটি সভা আহ্বান করিলেন। সভায় হাশিম, যুহরা প্রভৃতি গোত্রের বিশিষ্ট কুরায়শীগণ সমবেত হলেন। সভায় আলোচনার পর একটি সেবা-সংঘ গঠিত হল।

এই সংঘের সদস্যগণ যে সমস্ত কাজ করার জন্য শপথ ও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তা হলো:

  • আমরা দেশের অশান্তি দূর করব।
  • আমরা বিদেশী পর্যটকদেরকে রক্ষা করব।
  • আমরা গরীব দুঃখীদেরকে সাহায্য করব।
  • আমরা শক্তিশালীদেরকে দুর্বলদের উপর অত্যাচার করতে দিব না।

সেবকগণ আল্লাহর নামে শপথ করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন যে, তাঁরা উৎপীড়িত ও অত্যাচারিতদের পক্ষ সমর্থন করবেন এবং অত্যাচারীর নিকট হতে অত্যাচারিতের প্রাপ্য আদায় করে দিবেন। যেহেতু 'আরবী ভাষায় প্রতিজ্ঞাকে 'হিল' এবং অত্যাচারীর নিকট অত্যাচারিতের প্রাপ্য অধিকারকে 'ফুফুল' বলা হয়। এজন্যই এই সেবা সংঘ 'হিলফুল ফযুল' এবং তার সেবকগণ আহলু হিফিল ফযুল নামে বিখ্যাত। আবার কেউ কেউ বলেন: অতি প্রাচীন কালে জুরহমীদের আমলেও এইরূপ একটি সেবা-সংঘ গঠিত হয়েছিল। ফযল বিন ফাযালা, ফযল বিন ওদা'আ ফযল বিন হরস নামক তিন ব্যক্তি উক্ত সংঘের আহ্বায়ক ছিলেন। তাঁদের নামানুসারে উক্ত সংঘকে হিলফুল ফযুল বলা হত। কিন্তু সেই সংঘ সঙ্গে সঙ্গেই লুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। সেই লুপ্ত সংঘের নামানুসারে কুরায়শদের সেবা-সংঘও হিলফুল ফমূল নামে পরিচিত হয়।

রাসূল (সাঃ) ও এই সমিতির সদস্য ছিলেন। তিনিও 'আবদুল্লাহ্ বিন্ জুদ'আনের গৃহে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং অন্যান্য সদস্যদের সাথে শপথ ও প্রতিজ্ঞায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নবুওয়তপ্রাপ্তির পর বলেন, 'আবদুল্লাহ বিন জুদ'আনের গৃহে শপথ করে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তার বিনিময়ে আমাকে রক্তবর্ণ উষ্ট্র দান করলেও আমি সেই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতে সম্মত নেই। আজও যদি কোন উৎপীড়িত ব্যক্তি 'হে ফযুল প্রতিজ্ঞার সদস্যগণ। বলে ডাকে তবে আমি তার সেই ডাকে সাড়া দিব। কারণ ইসলাম ন্যয়ের প্রতিষ্ঠা এবং মযলুমের সাহায্যের জন্যই আসছেন।

এ প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী হিলফুল ফযূলের সদস্যগণ বহুদিন যাবত কাজ করতে থাকেন। এ সেবা-সংঘের প্রচেষ্টায় দেশের অত্যাচার অবিচার বহুলাংশে হ্রাস পেল, রাস্তা ঘাট নিরাপদ হয়ে উঠল। একবার খাস্'আম বংশীয় জনৈক ব্যক্তি তার পরমা সুন্দরী কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে মক্কায় 'উমরাহ করতে যায়। নবীহ্ নামক এক দুর্বৃত্ত বলপূর্বক কন্যাটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তখন জনতা তাকে বললঃ তুমি হিলফুল ফযূলের সদস্যদেরকে জানাও। তখন সে কা'বা শরীফের নিকটে দাঁড়ায়ে উচ্চৈঃস্বরে ডাকতে লাগলঃ হে হিলফুল ফমূল, হে হিলফুল ফুযুল। ডাক শুনামাত্র চতুর্দিক হতে সেবকগণ উলঙ্গ তরবারি হাতে নিয়ে দৌড়ায়ে এসে জিজ্ঞেস করলঃ কি বিপদ, বল। সে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। ঘটনা শুনে তারা নবীহের গৃহে উপস্থিত হয়ে তাকে বলল, ওরে পাপিষ্ঠ, তুই জানিস্ না, আমরা কে? আর আমরা কি প্রতিজ্ঞা করেছি? এ মুহূর্তেই মেয়েটিকে ফিরায়ে দে।

হিলফুল ফমূলের সেবকগণের যে কত শক্তি, তাঁদের প্রতিজ্ঞা যে কত অটল, নবীহ্ তা বুঝতেই পারে নি। এতদিন নিয়ম ছিল, 'জোর যার মুল্লুক তার'। নবীহ্ মনে করেছিল, যদিও শান্তি-সংঘ গঠিত হয়েছে, তবুও পুরাতন নিয়ম এত শীঘ্র উঠে যাবে কেন? যার শক্তি আসে সে হয়ত এখনও কিছু কিছু অন্যায় অবিচার করতে পারবে।

তাই সে বলল, আপনাদের আদেশ শিরোধার্য। কিন্তু আপনারা অনুগ্রহপূর্বক এ পরমা সুন্দরী মেয়েটিকে মাত্র এক রাত্রি রাখার অনুমতি দিন। সেবকগণ গুরুগম্ভীরস্বরে উত্তর করল, এক মুহূর্তের তরেও নয়। এখুনি মেয়েটিকে বের করে দাও। গত্যন্তর না দেখে বদমাশ তৎক্ষনাৎ মেয়েটিকে বের করে দিতে বাধ্য হল।

ইংল্যান্ডে 'অর্ডার অব্ নাইটহুড্' নামক যে সমিতি গঠিত হয়েছিল তার সদস্যগণ প্রায় এ ধরনের প্রতিজ্ঞাই করেছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ডের সমিতিটি 'হিলফুল ফযূল' সমিতির কয়েক শতাব্দী পরে গঠিত হয়েছিল।

নিখিল বিশ্বের তরুণ মুহাম্মদ বিশ্ব-তরুণের জন্য এ অধ্যায়ে কি সুন্দর আদর্শই না রেখে গেলেন। দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করা, গরীব দুঃখীকে সাহায্য করা, সাম্প্রদায়িকতা বিসর্জন দিয়ে আপন-পর, দেশী-বিদেশী নির্বিশেষে সমভাবে সকলের সেবা করা, অত্যাচারীকে বাধা দেওয়া, উৎপীড়িতের সহায়তা করা-এটা হল তরুণের কর্তব্য, এটা হল তরুণের ধর্ম। তরুণ জাগ্রত হও, চক্ষু খোল, ঐ দেখ, তোমার মহান আদর্শ-তরুণ মুহাম্মদ সংঘবদ্ধ হয়ে সহকর্মীদেরকে নিয়ে কি করতেছেন? কোথায় কোন পিতৃহীন য়্যাতীম ক্ষুধার তাড়নায় কাঁদতেছে, কোথায় কোন্ নিঃসহায় বিধবা নারী অন্ন-বস্ত্রের অভাবে কষ্ট পেতেছে, কোথায় কোন্ শয্যাশায়ী দুঃস্থ রুগ্ন পরিচর্যার অভাবে আর্তনাদ করতেছে, কোথায় কোন বিদেশী

পথিক কোন দুর্বৃত্ত কর্তৃক প্রতারিত হতেছে-তিনি তাই অনুসন্ধান করে বেড়াতেছেন। মূর্ত শাস্তি তরুণ মুহাম্মদ কোথাও বা কোন অনাথ শিশুকে কোলে নিয়ে দোলা দিতেছেন, কোথাও বা রোগীর শয্যাপার্শ্বে বসে তার পরিচর্যা করতেছেন, কোথাও বা কোন জনহিতকর কর্মে আত্মনিয়োগ করে সমাজ-সেবার কর্তব্য পালন করতেছেন। এ তরুণকেই আমরা কামনা করি, আমাদের দেশ কামনা করে, সারা বিশ্ব কামনা করে।

রাসূল (সাঃ)-এর প্রতিষ্ঠিত হিলফুল ফযুল সংঘ ইসলামের অভ্যুদয়ের পূর্ব পর্যন্ত বলবৎ ছিল। তৎপর এ সেবা সংঘ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ল। কারণ, সর্ব প্রকার অন্যায়, অমঙ্গল ও পাপের মূলোৎপাটন, করার এবং সর্বাধিক ন্যায়, মঙ্গল ও পূণ্য সাধনের দায়িত্ব নিয়ে যখন 'ইসলাম' আত্মপ্রকাশ করল তখন আর উক্ত সেবা-সংঘের কোন প্রয়োজনই থাকল না। পূর্ব আকাশের উদয়-তোরণে বিকশিত প্রভাতের ক্ষীর্ণ শুভ্র আলো যেমন সূর্যোদয়ের পূর্বাভাস স্বরূপ, সেবা সংঘের শাস্তি বিধানও ছিল তদ্রূপ ইসলামের অভ্যুদয়ের পূর্বাভাস স্বরূপ। দিবাকর উদয়াচলে গমন করলে যেভাবে প্রভাতের ক্ষীণ আলো বিলুপ্ত হয়ে যায়, ইসলামের আত্মপ্রকাশেও সেবা-সংঘ সেভাবেই নিষ্ক্রিয় ও রহিত হয়ে গেল।

 ব্যবসা 

'আরবগণ বিশেষতঃ কুরায়শ তথা ইসমা'ঈল বংশীয়গণ ইসলামের অভ্যুদয়ের সহস্র সহস্র বছর পূর্ব হতেই ব্যবসা-বাণিজ্য করে এসেছেন। বাণিজ্য ছিল তাঁদের জাতীয় পেশা। পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূল (সাঃ)-এর পূর্বপুরুষ হাশিম রোম-সম্রাট, ইয়ামানের শাসনকর্তা এবং আরবের বিভিন্ন গোত্রের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করে ব্যবসায়ের পথ আরও সুগম করে দিয়েছিলেন। স্বয়ং রাসূল (সাঃ)-এর চাচা আবু তালিবও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। প্রাপ্ত বয়স্ক হবার সাথে সাথেই রাসূল (সাঃ) হালাল ও পবিত্র উপায়ে জীবিকা নির্বাহের চিন্তা করতে লাগলেন। তিনি ব্যবসাকেই হালাল ও পবিত্র উপায়ে জীবিকা নির্বাহের এবং অর্থ উপার্জনের সর্বোত্তম উপায় বলে সিদ্ধান্ত করেন। বাল্যকালেই তিনি একবার বাণিজ্য উপলক্ষে আবূ তালিবের সাথে বুদ্রা পর্যন্ত ভ্রমণ করে এসেছিলেন। এ ভ্রমণে বণিকদের কাফেলায় থেকে বাণিজ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে তাঁর যথেষ্ট অভিজ্ঞতাও লাভ হয়েছিল।

বাল্যকালেই তাঁর সচ্চরিত্রতা, মহানুভবতা, কার্যদক্ষতা এবং অন্যান্য নানাবিধ গুণ-গরিমার সুখ্যাতি দেশময় ছড়িয়ে পড়েছিল। তখনই সর্বসাধারণ তাঁকে 'সাদিক' বা 'সত্যবাদী' উপাধি দান করেছিলেন। বয়ঃবৃদ্ধির সাথে সাথে তাঁর কর্ম-কুশলতা, ন্যায়-নিষ্ঠা এবং তাঁর স্বভাবগত যাবতীয় সদ্‌গুণ দিন দিন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হতে থাকে। তাঁর অসাধারণ গুণাবলীতে মুগ্ধ হয়ে জনসমাজ আবার তাঁকে 'আল্-আমীন' বা 'বিশ্বাসী' উপাধিতে বিভূষিত করল।

সেকালে সম্পদশালী লোকেরা মুনাফার নির্দিষ্ট অংশ প্রদানের চুক্তিতে নিজেদের মূলধন দিয়ে অভিজ্ঞ ও সুদক্ষ কোন নির্ভরশীল ব্যক্তির হাতে ব্যবসায়ের ভার সমর্পণ করত। রাসূল (সাঃ) যখন ব্যবসা করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, তখন অনেকেই তাঁকে ব্যবসায়ের জন্য আহ্বান করত এবং তিনিও তা আনন্দের সাথে গ্রহণ করতেন।

হাদীস শরীফে এবং ইতিহাসে রাসূল (সাঃ)-এর ব্যবসা সংক্রান্ত অনেক কথাই বর্ণিত হয়েছে। তিনি যাদের সাথে যৌথ কারবার করতেন তাদের বর্ণনাসমূহ পাঠ করলে জানতে পারা যায় যে, তিনি অতি সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে কারবার করতেন এবং কখনও কোন প্রতিশ্রুতি লংঘন করতেন না। অতি আয়াসসাধ্য হলেও তিনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে কোন দিনই কোন প্রকার ত্রুটি করতেন না। নিজে যথেষ্ট মতিগ্রস্ত হয়েও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করতেন। কারণ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা ব্যবসায়ীর একটি বড় গুণ।

আবুল হামসার পুত্র 'আবদুল্লাহ' (রাঃ) একজন সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, "নবীরূপে আবির্ভূত হবার পূর্বে আমি রাসূল (সাঃ)-এর সাথে ক্রয়-বিক্রয় সম্পর্কীয় একটি কারবার করেছিলাম। কারবারটি কিয়দংশ সমাধা হল, আর কিছু বাকী রইল। আমি অঙ্গীকার করলাম যে, (অনতিবিলম্বেই) আবার আসতেছি। ঘটনাক্রমে আমি এ অঙ্গীকারের কথা ভুলে গেলাম। তিন দিন পর্যন্ত তা মোটেই স্মরণ হল না। (স্মরণ হওয়ার পর) তৃতীয় দিন প্রতিশ্রুত স্থানে পৌঁছে দেখি, রাসূল (সাঃ) সে স্থানেই আমার অপেক্ষায় বসে আছেন। কিন্তু এ প্রতিশ্রুতি লংঘনের দরুন তাঁর বদনমণ্ডলে অসন্তুটির চিহ্নমাত্রও দেখা গেল না। তিনি শুধু এতটুকু বললেন, তুমি আমাকে বড় কষ্ট দিয়েছ (তোমার অপেক্ষায়) আমি তিন দিন যাবৎ এখানেই বসে আছি। ব্যবসা ক্ষেত্রে রাসূল (সাঃ)-এর কারবার বড় পরিস্কার ছিল। নবুওয়তের পূর্বেই তিনি যাদের সাথে কারবার করতেন তারাও পরবর্তীকালে মুক্ত কণ্ঠে একথার সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, দেনা-পাওনা এবং আদান-প্রদান সম্পর্কে রাসূল (সাঃ)-এর কারবার যে রূপ পরিস্কার ছিল, জগতে তার তুলনা নেই।

সায়িব নামক একজন সাহাবী ইসলাম গ্রহণ করে যখন রাসূল (সাঃ)-এর খিদমতে হাযিল হলেন তখন উপস্থিত লোকেরা রাসূল (সাঃ)-এর নিকট তাঁর পরিচয় দিতে চেষ্টা করলেন। রাসূল (সাঃ) বললেন, "আমি তাঁকে তোমাদের চেয়ে বেশি চিনি।" তখন সায়িব (রাঃ) বললেন, "আপনার প্রতি আমার মা বাপ কুরবার হউক আপনি আমার ব্যবসায়ের সাথী ছিলেন। আপনি সর্বদা কারবার নির্ঝঞ্ঝাট ও পরিষ্কার রাখতেন।

'আপনি (ক্রয়-বিক্রয়ে) কোন প্রকার প্রতারণা করতেন না এবং কারও সাথে ঝগড়াও করতেন না।

ক্রয়-বিক্রয় কালে কেউ কোন বিষয় সন্দেহ করলে, তার সন্দেহ অপনোদনের জন্য তিনি কখনও কসম করতেন না। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও কসম খাওয়া হারাম। সুতরাং এরূপ কসম খাওয়া ত রাসূল (সাঃ)-এর জন্য সম্ভবপরই ছিল না; পরন্তু কারবারের প্রসার ও মাল কাটতি হবার জন্য আল্লাহর কসম করাকেও তিনি পছন্দ করতেন না। একদা রাসূল (সাঃ) 'বুসরা'-এর বাজারে বেচা-কেনা করার সময় এক ব্যক্তির সাথে কোন বিষয়ে তাঁর মতানৈক্য হয়, তখন ঐ ব্যক্তি তাঁকে বলল, "আপনি লাত ও 'উয্যার কসম খেয়ে বলুন।" তিনি বললেন, "আমি কখনও এসব দেবতার কসম করি না।"

হযরত আবু কাতাদা হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "তোমরা কোন বস্তু বিক্রয় করার সময় অধিক কসম খাবে না। কারণ কসম দ্বারা মালের কাট্টি হয়, কিন্তু পরিণামে ধ্বংস সাধিত হয়।"

হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, কসম দ্বারা যদিও মালের কাটতি হয়, কিন্তু এই উপায়ে উপার্জিত মালে বরকত থাকে না।

রাসূল (সাঃ) গ্রাহককে কোন প্রকারে প্রতারিত করা অতি অন্যায় কাজ মনে করতেন। কাউকেও ক্রয়-বিক্রয়ের সময় কোন প্রকার প্রতারণা করতে দেখলে তিনি তার প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হতেন।

হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদিন রাসূল (সাঃ) খাদ্যশস্যের একটি স্তূপের নিকট গিয়ে তার ভেতরে হাত ভয়ে দিয়ে বুঝতে পারলে যে, নিচের শস্যগুলো ভিজা। তখন তিনি বললেনঃ "হে শস্যের মালিক, এটা কেমন কাও?" সে বলল, "হে আল্লাহর রাসূল বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছে।" তখন তিনি বললেনঃ "লোকে যেন দেখতে পায়, এরূপভাবে ভিজা শস্যগুলো উপরে রাখনি কেন? যে ব্যক্তি প্রতারণা বা বিশ্বাসঘাতকতা করবে, সে আমা হতে নয়, অর্থাৎ আমার সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত নয়।"

ব্যবসায় হালাল রুযি ও পবিত্র মাল উপার্জনের উত্তম উপায়। তাই যারা শরী'আতের বিধান অনুযায়ী সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসায়বৃত্তি অবলম্বন করবে, তাদের সম্বন্ধে রাসূল (সাঃ) বলেছেন যে, তারা অতি বড় সওয়াবের অধিকারী হবে এবং আল্লাহর নিকট অতি উচ্চ মর্যাদা লাভ করবে।

হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, "সততা অবলম্বনকারী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী নবী, সিদ্দীক এবং শহীদগণের সাথে অবস্থান করবে।"

অসদুপায় অবলম্বনকারী প্রতারক ব্যবসায়ীদেরকে রাসূল (সাঃ) ফাসিক ও বদকার বলে উল্লেখ করেছেন।

'উবায়দ বিন রফা'আ হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ফাসিক ফাজিরদের সাথে ব্যবসায়ীদের হাশর হবে, কিন্তু যে ব্যবসায়ী আল্লাহর ভয় রাখবে, (গ্রাহকদের সাথে) সদ্ব্যবহার করবে এবং সততা অবলম্বন করবে, (তারা বর্ণিত শাস্তি হতে অব্যাহতি পাবে।)

রাফি'বিন খদীজ (রাঃ) বলেন যে, কোন এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, কোন উপার্জন সবচেয়ে পবিত্রতম? (তদুত্তরে) তিনি বললেন, মানুষের নিজের হাতের কাজ এবং মরুর বেচাকেনা অর্থাৎ কৃষি, শিল্প এবং বাণিজ্য দ্বারা যে মাল উপার্জন করা হয় তাই পবিত্রতম। হাতের কাজ অর্থে শিল্প ও কৃষি এবং মবরুর ক্রয়-বিক্রয় অর্থে গরী'অত সম্মত এমন বাণিজ্য যাতে প্রতারণা বা বিশ্বাসঘাতকতা নেই।

নিখিল বিশ্বের আদর্শ সৃষ্টসেরা মহামানব হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ) পবিত্র উপায়ে অর্থোপার্জন করে জীবিকা নির্বাহের এবং অভাব অভিযোগের হাত হতে রক্ষা পাবার যে সুন্দর উপায় হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে গেছেন, সে আদর্শ অবলম্বন করলে কোন দিন কোন জাতি অভাবগ্রস্ত থাকতে পারে না। রাসূল (সাঃ) বলে গিয়েছেন, সততার সাথে কৃষি, শিল্প এবং বাণিজ্য করাই অর্থোপার্জনের সর্বোত্তম পন্থা। মহানবীর এ মহান আদর্শ গ্রহণ করে আজ শুধু জাপান আর জার্মানই নয় বরং ইউরোপ ও আমেরিকার আরও বহু জাতি বিরাট ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েছে। অথচ যে মুসলমান জাতি মহানবীর উম্মত হবার গৌরবে গৌরবান্বিত আজ তারা শিল্প ও বাণিজ্যে সকলের পিছনে পড়ে আছে। কারণ তারা নিজেদের ননীর নির্দেশ লংঘন করে মিথ্যা, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা প্রভৃতি দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে অর্থোপার্জনের সর্বোত্তম পন্থা শিল্প ও বাণিজ্যকে দুর্বল করে রেখেছে।

তাই আজ তারা পথের ভিখারী, অন্ন বস্ত্রের অভাবে আজ তাদের দৈনন্দিন জীবন বিপন্ন। এমন কি, অভাবের তাড়নায় সময় সময় পরের দ্বারে হাত পাততেও কুণ্ঠাবোধ করে না। কথায় বলে, জাতির পতন যখন আসে ঘনিয়ে, বুদ্ধি বিবেচনা সব যায় হারিয়ে।


পরিশেষেঃ 

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সঃ এর জীবনী সিরিজ পর্বের  পর্ব শেষ করেছি। এই সিরিজের ৪র্থ পর্বটি পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url