আল কুরআনের চিরন্তন বাণী সমূহ
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক আজ আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো 'আল কুরআনের চিরন্তন বাণী', 'আল কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে অমুসলিম মনীষীদের অভিমত', 'কুরআন ও হাদিসে কুদসির মধ্যে পার্থক্য', আসমানী কিতাব সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান এবং আল কুরআনের সপ্ত মঞ্জিল সমূহ সম্পর্কে। ইসলাম ধর্মের জন্য এগুলো হচ্ছে বেসিক কিছু আলোচনা। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-
![]() |
| আল কুরআনের চিরন্তন বাণী সমূহ |
আল কুরআনের চিরন্তন বাণী সমূহঃ
১. সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে তোমার রবের বাণী পরিপূর্ণ। কেউ তাঁর বাণী বদলাতে পারে না।
২. তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামতো চললে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা তো কেবল অনুমান অনুবর্তী।
৩. যদি সত্য তাদের কামনা বাসনার অনুবর্তী হত, তাহলে আসমান, জমিন ও এর মধ্যবর্তী সবকিছু বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত।
৪. তোমরা গণনা করলে আল্লাহর নিয়ামতের সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না।
৫. তারা কি মনে করে যে, আমি তাদের যে ধন জন দেই তা দিয়ে কেবল তাদের সর্ব প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করি না, তারা বুঝে না।
৬. মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য আমি যে পার্থিব সম্পদ দেই, তুমি তার প্রতি দৃষ্টিপাত করবে না।
৭. কোন জাতি নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করলে, আল্লাহ পরিবর্তন করেন না।
৮. আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে ভূ-পৃষ্ঠে কেউই রেহাই পেতনা। তিনি তাদের এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অবকাশ দেন।
৯. যে আখিরাতের ফসল চায় আমি তাকে তা বাড়িয়ে দেই, আর যে দুনিয়ার ফসল চায় আমি তাকে কিছু দেই, তবে তার জন্য আখিরাতে কিছুই থাকবে না।
১০. তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল। তিনি তোমাদেরকে অনেক ক্ষমা করেন।
১১. তোমরা যারা নিজেদের ওপর অবিচার করেছ, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হবে না।
১২. আযাব আসার পূর্বে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ কর।
১৩. মানুষের কৃতকর্মের জন্য জলে স্থলে বিপর্যয় ঘটে।
১৪. আসমান, জমিন এবং এ দু'য়ের মধ্যবর্তী কোন কিছুই আমি নিরর্থক সৃষ্টি করিনি।
১৫. তোমরা ভাল কাজ করলে তা তো নিজেদেরই জন্য, আর মন্দ কাজ করলে তাও নিজেদেরই জন্য।
১৬. যা ভাল তা দিয়ে মন্দের প্রতিকার কর।
১৭. অদৃশ্যের কুঞ্জী আল্লাহর হাতে।
১৮. জীব মাত্রই মরণশীল।
১৯. মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।
২০. যে মৃত্যু থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াও, সে মৃত্যুর সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হবেই।
আল কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে অমুসলিম মনীষীদের অভিমতঃ
বিশ্বের খ্যাতনামা অমুসলিম মনীষীদের এবং জ্ঞানী গুণীদের স্পষ্ট অভিমত পেশ করা হল। এসব জগদ্বিখ্যাত ও দেশ বরেণ্য মনীষী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আলকুরআনের প্রশংসা করেছেন। বস্তুত তারা নিজেদের বিবেকের কাছে সারা দিয়েছেন এবং মানবতার রূপ প্রকাশ করেছেন। আলকুরআন সম্বন্ধে তাদের স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ অভিমতের জন্য তারা প্রশংসার যোগ্য।
১. বিখ্যাত ভাষাবিদ পণ্ডিত ইমানুয়েল ডেস্ক বলেন- আলকুরআনের সাহায্যে আরবরা মহান আলেকজান্ডারের জগৎ হতে বৃহত্তম জগৎ, রোম সাম্রাজ্য হতে বৃহত্তর সাম্রাজ্য জয় করে নিয়েছে। আলকুরআনের অনুসারী আরব মুসলমানরা এসেছিল মানব জাতিকে জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত করতে।
২. চেম্বার এনসাইক্লোপিডিয়ায় বলা হয়েছে- আলকুরআনে অত্যাচার, মিথ্যা, অহংকার, প্রতিহিংসা, গীবত, লোভ, অপব্যয়, অসদুপায়ে অর্থ উপার্জন, খিয়ানত এবং কারো সম্বন্ধে খারাপ ধারণা পোষণ করা ইত্যাদির নিন্দা করা হয়েছে। এটাই আলকুরআনের একটি মহান সৌন্দর্য।
৩. ফ্রান্সের ড. গস্তেওলিবাম বলেন- আলকুরআন মানুষের অন্তঃকরণে এরূপ জীবন্ত এবং শক্তিশালী ঈমানের প্রেরণা সৃষ্টি করে যাতে সন্দেহের লেশমাত্রও থাকতে পারে না।
৪. প্রফেসর রেনল্ড নিকলসন বলেন- আলকুরআনের প্রভাবেই আরবী ভাষা সমগ্র মুসলিম জগতে পবিত্র ভাষারূপে সমাদৃত হয়েছে। আলকুরআন আরবের কন্যা হত্যা প্রথার বিলোপ সাধন করেছে।
৫. মি. এস লিডর বলেন- আলকুরআনের শিক্ষা হতেই দর্শন বিভাগের উদ্ভব হয়েছে এবং উহা উন্নতির এরূপ চরম শিখরে পৌঁছিয়েছিল যে, ইউরোপের বড় বড় সাম্রাজ্যের শিক্ষাকেও অতিক্রম করেছিল।
৬. জার্মান দার্শনিক জনজাকরিসক বলেন- বিধর্মীরা যখন পয়গম্বরের মুখে আলকুরআন শুনত তখন তারা অস্থির হয়ে সিজদায় পড়ে যেত এবং ইসলাম গ্রহণ করত।
৭. মি. বেটল্লী লেনপুল বলেন- একটি বড় মাযহাবের জন্য যা আবশ্যক আলকুরআনে তা সবই আছে এবং একজন মহান পুরুষ হযরত মুহাম্মদ (স) এর মধ্যেও উহা ছিল।
৮. এইচ. জি. ওয়েল্ল্স বলেন- আলকুরআন মুসলমানদেরকে এরূপ ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ করেছে যাতে বংশগত এবং ভাষাগত ব্যবধানও কোন পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে না।
৯. এডওয়ার্ড ডি. জি. ব্রাউন বলেন- আমি যতই আলকুরআনের আয়াতসমূহের বিষয় চিন্তা করি উহার অর্থ বুঝতে চেষ্টা করি, ততই আমার অন্তঃকরণে উহার মাহাত্ম বৃদ্ধি পেতে থাকে। অপরপক্ষে যখন জেন্দাবেস্তা (পারসিকদের ধর্মগ্রন্থ) কিংবা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ, অতীতকালের ঘটনাবলি অথবা কোন গবেষণার জন্য অধ্যয়ন করি, তখন উহা অন্তরে বোমা স্বরূপ মনে হয়।
১০. স্যার উইলিয়াম বলেন- আলকুরআনের স্বাভাবিক এবং নৈসর্গিক দলিল-প্রমাণ দ্বারা আল্লাহ পাকের অস্তিত্বকে এরূপ প্রমাণ করা হয়েছে, যা মানুষের মনকে আল্লাহর তাবেদারী এবং কতৃজ্ঞতা জ্ঞাপনের দিকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে।
কুরআন ও হাদীসে কুদসীর পার্থক্যঃ
কুরআনঃ
১. কুরআন মজিদ জিবরাইল (আ) ছাড়া নাযিল হয়নি এবং শব্দ ভাষা নিশ্চিত ভাবে লাওহে মাহফুয হতে অবতীর্ণ।
২. নামাযে কুরআন মজিদই শুধু পাঠ করা হয়। কুরআন ছাড়া নামায সহিহ হয় না।
৩. অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা হারাম।
৪. কুরআন মজিদ একটি মুজিযা।
৫. কুরআন অমান্য করলে কাফির হতে হয়।
৬. কুরআন নাযিল হওয়ার জন্যে আল্লাহ ও রাসূলের মাঝখানে জিবরাইল (আ) এর মধ্যস্থতা জরুরি।
হাদীসে কুদসী:
১. হাদীসে কুদসীর মূল বক্তব্য আল্লাহর কাছ থেকে ইলহাম কিংবা স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত। কিন্তু ভাষা রাসূল (স) এর নিজস্ব।
২. নামাযে হাদীসে কুদসী পাঠ করা যায় না অর্থাৎ হাদীসে কুদসী পাঠে নামায হয় না।
৩. হাদীসে কুদসী অপবিত্র ব্যক্তি, এমনকি হায়িয-নিফাস সম্পন্না নারীও স্পর্শ করতে পারে।
৪. কিন্তু হাদীসে কুদসী মুজিযা নয়।
৫. হাদীসে কুদসী অমান্য করলে কাফির হতে হয় না।
৬. হাদীসে কুদসীতে জিবরাইলের (আ) মধ্যস্থতা জরুরি নয়।
আসমানি কিতাব
প্রঃ ১. আসমানী কিতাব কাকে বলে?
উত্তরঃ মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা রাসূলগণের উপর যে কিতাব নাযিল করেছেন, তাকে আসমানী কিতাব বলে।
প্রঃ ২. মোট আসমানী কিতাবের সংখ্যা কতটি?
উত্তরঃ ১০৪ টি।
প্রঃ ৩. প্রধান আসমানী কিতাব কয়টি?
উত্তরঃ ৪ টি।
প্রঃ ৪. সর্বশেষ আসমানী কিতাবের নাম কী?
উত্তরঃ আল কুরআন।
প্রঃ ৫. আসমানী কিতাবের বিষয়বস্তু কী?
উত্তরঃ মানবিক অধিকার।
প্রঃ ৬. প্রধান আসমানী কিতাব কাদের উপর নাযিল হয়?
উত্তরঃ
১. কুরআন হযরত মুহাম্মদ (স) এর উপর।
২. তাওরাত: হযরত মুসা (আ) এর উপর।
৩. ইনজিল হযরত ঈসা (আ) এর উপর।
৪. যাবুর : হযরত দাউদ (আ) এর উপর।
প্রঃ ৭. প্রধান আসমানী কিতাবগুলো কোন কোন ভাষায় নাযিল হয়েছে?
উত্তরঃ আরবী, ইবরানী, সুরিয়ানী ও ইউনানী ভাষায়।
প্রঃ ৮. আল্লাহ কিভাবে রাসূলদের প্রতি ওহি নাযিল করেন?
উত্তরঃ ফিরিশতা জিবরাইল (আ) এর মাধ্যমে।
প্রঃ ৯. সহিফা কী?
উত্তরঃ আল্লাহ প্রেরিত ওহি। তবে সহিফা খুবই ক্ষুদ্র আকৃতির পুস্তিকা।
প্র: ১০. কতগুলো সহিফার পরিচয় পাওয়া গেছে?
উত্তরঃ ১০০ টি।
প্র: ১১. কোন নবীর উপর কতগুলো সহীফা নাযিল হয়?
উত্তরঃ হযরত আদম (আ) এর ওপর ১০ টি, হযরত ইদ্রিস (আ) এর ওপর ২০ টি, হযরত শীষ (আ) এর ওপর ৫০ টি, হযরত ইবরাহীম (আ) এর ওপর ১০ টি, তওরাত নাযিলের পূর্বে হযরত মুসা (আ) এর ওপর ১০ টি।
আল কুরআনের সপ্ত মানযিল সমূহ:
১. সূরা ফাতিহা থেকে সূরা নিসা শেষ পর্যন্ত
২. সুরা মায়িদা থেকে সুরা তাওবা শেষ পর্যন্ত
৩. সূরা ইউনুস থেকে সূরা নাহল শেষ পর্যন্ত
৪. সূরা বনী ইসরাইল থেকে সূরা ফুরকান শেষ পর্যন্ত
৫. সূরা শুআরা থেকে সূরা ইয়াসিন শেষ পর্যন্ত
৬. সূরা সাফফাত থেকে সূরা হুজুরাত শেষ পর্যন্ত
৭. সূরা কাফ থেকে সূরা নাস শেষ পর্যন্ত।
